প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাণিজ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) নয়া দিল্লিতে দুই দেশের সরকারপ্রধান বৈঠকে জ্বালানি তেল পাওয়ার বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে প্রতিবেশী দু’দেশ সমঝোতা স্মারক সই করলেও বরাবরের মতোই ঝুলে থাকল তিস্তা নদীর বিষয়ে একই রকমের চুক্তি।

তবে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিস্তা চুক্তির জটও অচিরেই খুলবে বলে তিনি আশা রাখছেন।

তিন বছর পর শেখ হাসিনার ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দুই শীর্ষ নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি একান্তেও আলাপ করেন।

বৈঠক শেষে উভয় দেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক করে পানি প্রত্যাহারসহ সাতটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

দিল্লিতে কর্মব্যস্ত এই দিনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীন ধনখড়ের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।

তার দিনের কর্মসূচি শুরু হয় রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে ফুল দিয়ে। এদিন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও আহত ভারতীয় যোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ তুলে দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, জ্বালানিসহ অন্য অনেক বিস্তৃত ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি।

এক টুইটে তিনি আরো বলেন, বৈঠকে আন্তঃযোগাযোগ জোরদার, বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব মজবুত এবং তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি ও অন্য অনেক কিছুতে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবেলায়ও একসঙ্গে কাজ করতে মতৈক্য হয়েছে।

জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় রামপালের মৈত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি বলেন, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে।

এদিন দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত রামপালের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উদ্বোধন করেন।

সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদি বলেন, আজ মৈত্রী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উদ্বোধন বাংলাদেশে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সুযোগ বাড়াবে।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র যে ক্ষেত্রে পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ তৈরি করেছে, সেই সুন্দরবন সংরক্ষণে পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজ করার কথাও বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে বাণিজ্য সুসংহত হওয়ার আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যার মধ্যে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সেপা) বিষয়টিও।

বৈঠকশেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার বাংলাদেশ। এই অগ্রগতিকে আরো ত্বরান্বিত করতে দ্বিপক্ষীয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) করার আলোচনা দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করতে চান তারা।

দুদেশের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে মোদি বলেন, আজ বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। মানুষে মানুষে সংযোগের ক্ষেত্রে অব্যাহত উন্নতি হচ্ছে।

কলমকথা/এমএনহাসান